
নীরা পর্ব – ২
অরুণিমা মণ্ডল দাস
নীরাপর্ব - ২
---------------------------------------------------------------------
পর্ব - ০২
নীরার বিয়ে হয়ে গেল। আকাশ যখন এলোমেলো ছিল। পাতাগুলো প্রেমিকার টানে কুঁচকে যাচ্ছিল । মেঘলা আকাশ, মেঘলা মন, মেঘলা যৌবন। নীরা বুঝতে পারছিল না ঠিক ‘বিয়ে’ কাকে বলে? একটা ছেলে একটা মেয়ের বাসর, ফুলশয্যা সম্বন্ধে কোন জ্ঞান নেই নীরার। সংসারের অ আ ক খ-এর অভিজ্ঞতাও তাঁর মধ্যে ছিল না। তবু তাঁকে একপ্রকার মনের অনিচ্ছা সত্ত্বেও একরাশ পাথর বুকে নিয়ে বিয়ের পিড়িতে বসতে হল। “যদিদাং হৃদয়ং মম” মন্ত্রে দীক্ষিত হতে হল।
একটা আঠারো বছরের রোগা পাতলা মেয়ে এক ‘বাঙাল’ পরিবারে তাও আবার রগচটা শিক্ষিত হয়েও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। বৌ মানে তারা একপ্রকার পায়ের জুতো মনে করতেন।
পরিবারের থেকেও মুর্খ পাড়ার বাঙাল মহিলারা। নীরা একা থাকতে, কম কথা বলতে ও নীরার পড়াশোনা করাটা তাঁদের সহ্য হত না। তাঁরা ঝগড়া বাজিয়ে রাখত ও মানসিক অত্যাচার করত নীরার উপর। স্বামীকে দিয়ে মার খাওয়ানো থেকে যে কোন সময়ে ছোট করে রেখে মজা পেত, তাঁরা মূর্খ বলে?
স্বামীর জিনিস জোর করে বৌয়ের কাছ থেকে নেওয়া হত। গালি-গালাজ, লাথি-ঝাটা, মারপিট লেগেই থাকত। শুধুমাত্র শিক্ষিত বাড়িতে থাকা কাজের লোক মনে করা হত। কোনরকম ভালোবাসা কোনরকম অধিকার দেওয়া হত না। অধিকার ফলাত বাংলাদেশ থেকে, শ্বশুর শাশুড়ি অবৈধভাবে ইন্ডিয়ান কাগজপত্র তৈরি করে। তাঁর উপর দিয়ে সম্পত্তি বাঁচাল, কাগজপত্র করল, ঘর-বাড়ি প্রতিপত্তি জমাল, সেই মেয়েটিকে ব্যবহার করল, শুধুমাত্র একজন একশ বছরের বুড়ো লোক পালন করার জন্য। সেই মেয়েটিকেই শ্বশুর শাশুড়ি দুটি ননদ মিলে অযথা যথেষ্টভাবে মানসিক অত্যাচার করত আর বর প্রত্যেকদিন…।
নীরার জীবন হয়ে উঠল আর এক নরক। বাংলাদেশে থাকতেন সারাবছর, দুই তিন মাস এসে স্থায়ী বাসিন্দা নীরার উপর মানসীক ও শারীরিক অত্যাচার চালাতেন। চুলের মুঠি ধরে মারতেন, গালি-গালাজ করতেন। প্রায়শঃ বাড়ি থেকে চলে যেতে বলতেন।
নীরা খালি হাতে আসেনি। নীরার কাকার কাছ থেকে লাখ দেড়েক টাকা নেওয়া হয়েছিল। নীরা একজন শিক্ষিত মেয়ে। এতদিনে নীরার একটা কোলের বাচ্চা। ছোট বাচ্চাকে নিয়ে জব করাও খুব কষ্টের ব্যাপার তাই এইরকম অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে প্রায় আট থেকে নয় বছর।
নীরার স্বামী শিক্ষিত বটে, তবে অকর্মন্য, ছোটোলোক। নিজের যোগ্যতা নেই তাই বৌকে যেকোন কাজে ছোট করে অযোগ্য প্রমাণ করে মজা পায়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনরকম ভালো সম্পর্ক নেই। খেতে, পরতে দিতে চায় না। যে কোন অজুহাতে পাড়ার মহিলাদের বা আত্মীয়স্বজনদের সামনে মারধর করতে খুব মজা পেত। আর মূর্খ মহিলা ও পাড়ার লোকেরাও খুব আনন্দ পেত। তাঁরা চাইত নীরা পায়ের তলে পড়ে থেকে পচে পচে মরুক। কেউ কারোর ভালো চায় না।
যাইহোক, নীরা লড়াই করে বেঁচে আছে। কিন্তু মনটা পুরো ভেঙ্গে চুরমার। যে আশা নিয়ে বিয়ে করতে এসেছিল সে সব শেষ। স্বামীর কাছে থেকে কোনদিন শারীরিক, দৈহিক, মানসিক, আত্মিক, আর্থিক সম্মান কোনকিছুই পায়নি।
এক পাখি উড়ে যাওয়া দেখতে দেখতে বিকেলটা কেটে যায়। কতশত গৃহবধূ এভাবে যন্ত্রণায় দিন কাটাচ্ছে, পরাধীনতার অনলে নিজেদেরকে বলি-ও দিচ্ছে অনেকে……।।
মতামত দিন