এক নরকের জীবন থেকে পালিয়ে বেঁচে আর এক নরকীয় জীবন অপেক্ষা করছিল সেটা নীরা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি। নীরা পালিয়ে আসতে বুদ্ধি করে নীরার বাড়িতে থাকা জামাইটা পিসিদের সঙ্গে মিলে শুধুমাত্র সম্পত্তির লোভে মেরে দিল নীরার দাদুকে।
সাহিত্য ও শাস্ত্রীয় সংস্কৃতি
নীরা পর্ব – একটি বাস্তব গল্প
নীরা পর্ব – একটি বাস্তব গল্প
নীরা পর্ব – একটি বাস্তব গল্প
কলমেঃ অরুনীমা মণ্ডল দাস
নীরা
------------------------------------------------------------------------------------
পর্ব - ০১
নীরা এক নির্যাতিতা মেয়ে। নীরার জন্ম হয়েছিল এক নামী হাসপাতালে। চারিদিকে বসন্তের আনাগোনা, দোলের রঙ্গিন প্রজাপতিরা উড়ছে ঠিক তখনই মায়ের কোল জুড়ে জন্ম নিয়েছিল নীরা। ‘নীরা’ নামটি তাঁর জ্যাঠুর রাখা। নীরার বাবা একজন ডাক্তা, জ্যাঠুও। মধ্যবিত্ত জেলে পরিবার, বাবারা আটভাই।
কোলকাতায় নীরা বেড়ে উঠতে লাগল। মামাবাড়িতে থাকাকালীন কত স্বপ্ন কত আশ্বাশ দৌড়াদৌড়াই করতে থাকে তাঁর শিরা উপশিরায়।
নীরা আপনমনে বড় হতে থাকে, একটা মেয়ের বড় হওয়া স্বপ্ন, তাঁর আত্মাকে বড় করে তোলা অনেক কষ্টের কাজ।
নীরার যখন চার বছর বয়স, তখন তাঁর জীবনে নেমে এল বিপর্যয়। স্বচ্ছল জীবনযাপন ছিল তাঁর, কিন্তু তাঁর বাবা ভালো মনে মানুষ ছিলেন না বলা যেতে পারে। পুরুষদের ‘ইগো’ জিনিসটা একটু বেশি আর অন্যের কথা শোনে বেশি। তাই অন্যের কথা শুনে বৌকে সন্দেহ করে মারধর করত। বৌ-বাচ্চাকে ‘কোণঠাসা’ জীবনে বাধ্য করত। বাচ্চাদের সামনে পর্যন্ত মা—কে ধরে মারধর করত। নীরার মা’র শিক্ষা থাকলেও বুদ্ধি ছিল কম। তাই কিছুই করতে পারেনি বা করার প্রয়োজনও মনে করেনি ‘নিজে বাঁচলে বাপের নাম’। তাই নিজেকে বাঁচাতে এক নরকে। বংশটাই পুরোটা নরক ছিল। শিক্ষিত বংশ হলেও আটটা ভাই একেবারে অলস আর গন্ডমূর্খের মত আচরণ করত। নীরার জ্যাঠিমারা যেমন স্বার্থপর ছিল তেমনই ছিল শয়তান, জঘন্য ও নীচ মনের মানুষ।
এতদিন মামাবাড়িতে ভালোই কাটছিল নীরার। এরপর মেদিনীপুরের গ্রামের বাড়িতে চলত তাঁর নরক জীবনযাপন। নীরার একটি বোন ছিল।
পরিবারের কেউই ভালোবাসত না। শুধুমাত্র সম্পত্তি ও টাকার লোভে ভালোবাসার মোহে মজিয়ে রাখত।
নীরার নরকযন্ত্রণা শুরু হল তাঁর পাঁচ বছর বয়স থেকে। নীরার বোনও অসহ্য কষ্টের মধ্যে জীবন যাপন করত। নীরার জ্যাঠু, জ্যাঠিমা, পিসি বাড়িতে ঘরজামাই … এরা সকলে মিলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মিথ্যে কথা বলে তাঁর বাবাকে দিয়ে মার খাওয়াতো। একরকম জীবন নরক হয়ে উঠেছিল।
তারপর জীবনে এলো দাদু। বাবা প্রচুর নেশা করত। মেয়েদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতো। বাবার জীবন একপ্রকার শেষ। নেশা করে এখানে ওখানে পড়ে থাকত। ডাক্তারি কাজকর্ম ছেড়ে একপ্রকার ঘরে বসে থাকল। আর মেয়েদের ও পালিত বাবার উপর করত অকথ্য অত্যাচার।
একবার নীরার কথা ভাবুন? মাথা থেকে মায়ের ছায়া নামতে না নামতেই শুরু হয়েছিল বাবার অত্যাচার। বাড়ির প্রায় সকলেই মানসিক ও শারিরীক অত্যাচার করত। এসব সহ্য করেই নীরা বড় হতে লাগল। অর্ধেক দিন খেতেই পেত না। কোনো কোনো দিন কিছু না খেয়েই স্কুলে যেতে হত। অনেক কষ্টেই চালাত নিজের পড়াশোনা। পড়ানোর নাম করেও বাবা প্রচুর মারধর করত। ঠিকঠাক খেতে পরতে দিত না। জ্যাঠিমা, দিদিরা হিংসে করত, পিসিরা দাদুর ঘাড়ে বসে খেত, আর নীরা ও নীরার বোনকে দিয়ে করানো হত রান্নাবান্না ও বাড়ির যাবতীয় কাজ। অন্যদিকে বাবা তো ছিলেন এককথায় কসাই, ডাক্তার তো কখনো বলাই যায় না। একজন জ্যাঠুও ডাক্তার, কিন্তু সেও তাঁর বাবাকে সুস্থ্য করার কোন ব্যবস্থাই করেননি শুধুমাত্র নিজের ‘ইগো’ কে সন্তুষ্ট করার জন্য। নীরা নিজেই বুঝতে পারছিল না যে সে কী করবে? নীরাও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত জীবনযাবপন করছিল।
নীরার বোনটাও হাসিখুশি থাকত, তাঁর জীবনটাও নষ্ট করে দেওয়া হল। মাত্র ষোলো বছর বয়সেই জোর করে এক বুড়োর সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। বাড়িতে এক দিদি ঘরজামাই থাকতেন, উনি খুব বাজে চরিত্রের শয়তান প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। বাইরে ভালো মানুষ সেজে থাকত দিদি, আর দাদাবাবু খুব মানসিকভাবে অত্যাচার করত। গালাগালি করত, যখন তখন গায়ে হাত দিত। বাড়িতে মাধ্যমিক পরিক্ষার সময় জোর করে পর্নোগ্রাফি দেখাত, যাতে সে বাজে কাজে নিজের লাইফটা বরবাদ করে নেয়। বারবার শরীরে যেখানে সেখানে হাত দিত। নোংরা মজা অনুভব করত। খুব বাজে প্রকৃতির মানুষ।
বিয়ের জন্যও এত চাপ দিত যে, নীরা মানসিকভাবে যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে কোনরকম একজন বাংলাদেশী আধাবুড়ো, তাকে না দেখে শুনেই আর এক নরকে নিজেকে ফেলে দিতে বাধ্য হল। নীরা নিজেই বুঝতে পারছিল না কী করবে? দাদুকে বাবা মারত, বাবা সমসময় ঝগড়া করত, ছোট বোনের বিয়ে হয়ে যেতে বাবার পাগলামো আরো বেড়ে গিয়েছিল। কী করবে? কোথায় যাবে? ওই আঠারো বছর বয়সে আত্মহত্যা করে? কী করবে বুঝে উঠতে পারছিল না।
যাকে পেলো, সে ভালো কিনা? তাঁর পরিবার ভালো কিনা? না দেখেই এক দিনে লাফিয়ে পালানোর সিদ্ধান্ত নিল। ভাবল ছেলেটা বলছে ভালোবাসে আর ভালোবেসে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু আসলে ছেলেটা কোনদিন ভালোবাসেনি। শুধুমাত্র নিজের স্বার্থের জন্য নীরাকে বিয়ে করেছিল।
এক নরকের জীবন থেকে পালিয়ে বেঁচে আর এক নরকীয় জীবন অপেক্ষা করছিল সেটা নীরা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি। নীরা পালিয়ে আসতে বুদ্ধি করে নীরার বাড়িতে থাকা জামাইটা পিসিদের সঙ্গে মিলে শুধুমাত্র সম্পত্তির লোভে মেরে দিল নীরার দাদুকে।
পাঠকগণ এবার আপনারাই জানান যে এখানে নীরার কীই বা দোষ? আর তাঁর এখন কী করা উচিত?
মতামত দিন