
মহালয়া
কলমেঃ কথাকলি
মহালয়া নিয়ে কিছু কথা
------------------------------------------------------------
শরতের শুভ্রনীল আকাশে দেবীর আগমনের আনন্দে মহালয়ার সকালে আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছে চন্ডীপাঠের মন্ত্র...
“সিংহস্থা শশীশেখরা মরকতপ্রেক্ষাঃ চতুর্ভিভুজৈঃ,
শঙ্খং চক্র ধনু শরাংশ্চ দধতিনেত্রৈঃ স্থিভিঃশোভিতা,
আমুক্তাঙ্গদ হারকঙ্কন রণংকাঞ্চী কন্বংনূপুরা – দুর্গা,
দুর্গতিনাশিনী, ভবতুয়ো রত্নোলস্যৎকুন্তলা।”
শুভ মহালয়া, শুভ মহালয়া। মহালয়ার আগমনে শরতের আকাশ বাতাস খুশিতে উচ্ছ্বসিত। কিন্তু কেন এই মহালয়া একটু জানা দরকার! মহালয়া মানেই তারপর থেকে দূর্গাপূজার শুভারম্ভের দিন গোনা, মহালয়ার ৬ দিন পর মহাসপ্তমী। এই মহালয়ার মাধ্যমেই দেবীর আমন্ত্রণ। তবে এর চেয়েও মহালয়ার আরও বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, যা অনেকটা এই রকম...
ত্রেতা যুগে ভগবান শ্রীরামচন্দ্র অকালে দেবীর আরাধনা করেছিলেন লঙ্কা জয় করে সীতাকে উদ্ধারের জন্য। যদিও আসল দুর্গাপূজার সময় কিন্তু বসন্তকাল, যাকে আমরা বাসন্তী পুজো হিসেবে জানি। এদিকে শ্রীরামচন্দ্র অকালে-অসময়ে পূজা করেছিলেন বলে এই শরতের পূজাকে দেবীর অকাল-বোধন বলা হয় ।
সনাতন ধর্মে কোন শুভ কাজ করতে গেলে, বিবাহ ইত্যাদি করতে গেলে প্রয়াত পূর্বজদের স্মরণে, তাদের পিতা-মাতা সমেত সমগ্র জীব-জগতের জন্য তর্পণ করতে হয়। কিছু মন্ত্রপাঠপূর্বক শুভকার্যাদির মাধ্যমে অঞ্জলি প্রদান করতে হয়। তর্পণ মানে তুষ্ট করা। ভগবান শ্রীরাম লঙ্কা বিজয়ের আগে দেবী মা কে তুষ্ট করতে এভাবেই তর্পণ করেছিলেন।
সেই অনুসারে এই মহালয়া তিথিতে যারা পিতৃ-মাতৃহীন তারা তাদের পূর্বপুরুষদের স্মরণ করে, তাঁদের আত্নার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি প্রদান করেন। হিন্দু সনাতন ধর্মানুসারে এই দিনে প্রয়াতঃ আত্মারা এই তর্পণ গ্রহণ করতে মর্ত্যে আসেন। এইসমস্ত প্রয়াতঃ পুণ্যাত্মাদের যে সমাবেশ তাকে ‘মহালয়’ বলা হয়। মহা+আলয় = মহান আশ্রয়, তা থেকে মহালয়া, দেবী মায়ের চরণাশ্রিত আমরা সবাই। পিতৃপক্ষের শেষদিন এটি।
মহালয়াতে যারা গঙ্গায় অঞ্জলি প্রদান করেন পূর্বজদের আত্মার শান্তির জন্য, তারা শুধু পূর্বপুরুষদের নন, পৃথিবীর সমগ্র কিছুর জন্য প্রার্থনা ও অঞ্জলি প্রদান করেন।
“যে-অবান্ধবা বান্ধবা বা যেন্যজন্মানি বান্ধবা” – অর্থাৎ যারা বন্ধু নন, অথবা আমার বন্ধু ও যারা জন্ম-জন্মাত্মরে আমার আত্মীয় বন্ধু ছিলেন, তারা সকলেই আজ আমার অঞ্জলি গ্রহনণ করুন।
যাদের পুত্র নেই, যাদের কেউ নেই আজ স্মরণ করে তাদের জন্যও অঞ্জলি প্রদান করতে হয়।
“যেযাং, ন মাতা, ন পিতা, ন বন্ধু” –
অর্থাৎ যাদের মাতা-পিতা-বন্ধু কেউ নেই আজ স্মরণ করার তাদেরকেও স্মরণ করছি ও প্রার্থনা করছি তাদের আত্মা তৃপ্তিলাভ করুক।
এ দিন তর্পণ করলে পিতৃপুরুষেরা আমাদের আশীর্বাদ করেন। এছাড়াও এদিনে দেবী দুর্গার বোধন করা হয়, বোধন অর্থ জাগরণ। তাই মহালয়ার পর দেবীপক্ষের শুক্লপক্ষের প্রতিপদে ঘট বসিয়ে শারদীয়া দুর্গা পুজার সূচনা করা হয়।
প্রসঙ্গতঃ যে শ্রাবণ থেকে পৌষ ছয়মাস দক্ষিণায়ন। দক্ষিণায়ন দেবতাদের ঘুমের কাল। তাই বোধন অবশ্যই প্রয়োজন, আরও বলা দরকার যে মহালয়ার পর প্রতিপদে যে বোধন হয় সে সময়ও সংকল্প করে দুর্গা পূজা করা যায়। একে বলে প্রতিপদকল্পরম্ভা, তবে সাধারণত আমরা ষষ্ঠি থেকে পূজার প্রধান কার্যক্রম শুরু হতে দেখি যাকে বলা হয় ষষ্ঠাদিকল্পরম্ভা।
কিছু প্রাচীন বনেদী বাড়ি এবং কিছু মঠ মন্দিরে প্রতিপদ কল্পরম্ভা থেকে পুজো হয়। যদিও প্রতিপদ কল্পরম্ভা থেকে শুরু পুজোতেও মূল আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয় ষষ্ঠি থেকেই এবং সপ্তমী থেকে বিগ্রহতে। প্রতিপদ থেকে শুধু ঘটে পূজো ও চণ্ডী পাঠ চলে।
শুভ মহালয়া!
মতামত দিন