
খোঁজ-খবর
অধ্যাপক আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
খোঁজ-খবর
-------------------------------------
সুরেন বর্মন। বয়স পঁয়ষট্টি। পেশায় কৃষক। নিজে নিরক্ষর, কিন্তু শত কষ্ট করে হলেও একমাত্র ছেলে সোমনকে হস্টেলে রেখে পড়িয়েছেন। সোমেন ভালো রেজাল্ট করেছে, চাকরিও পেয়েছে, এখন সে কলকাতায় সেটেল্ড। আর সুরেনবাবু থাকেন সেই অজপাড়া গাঁ চণ্ডীপুরে, নিজ কুঁড়েঘরেই।
গ্রাম থেকে এক কিলোমিটার দূরে রয়েছে একটি ছোট মোড় – আয়ড়া। সেখানে কিছু দোকানপাট আছে। সেদিন চৈত্রের আকাশ আগুন ঝরাচ্ছিল। একটু বেলা গড়াতেই, সুরেনবাবু হাঁটতে হাঁটতে মোড়ে গেলেন। এক মোবাইল দোকানে গিয়ে বলেন, বাবাজি দেখো তো কী সমস্যা হইছে এই মোবাইলটার?
-না তো, কিছুক্ষণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে, কোনও সমস্যা নেই কাকু। সব ওকে আছে।
-ক্ষীণ কণ্ঠে, তাইলে, সোমেনের ফোন কেনে আসে না?
আজ পাঁচ দিন হল ছেলের কোনও ফোন আসেনি। বুকের ভেতরটা কেমন খাঁ খাঁ করছিল। রাতটা কোনও রকমে কাটালেন। ভোরবেলা মোরগের ডাকাডাকি শুরু হতেই হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গেলেন পাশের বাড়িতে বিমলের কাছে। বিমল স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র, সামনে ফাইনাল পরীক্ষা। কাকভোরে উঠে পড়তে বসেছে। সুরেনবাবু তার কাছে ছুটে গিয়ে বললেনঃ বাবু, আইজ ক’দিন হলি তোর সোমেন দা’র ফোন আসেইনি, ওক ফোনটা লাগেই দি তো।
বিমল ফোনটা লাগিয়ে দিল।
ফোনটা রিং হচ্ছে, কিন্তু কেউ রিসিভ করছে না। বিমল আর একবার ডায়াল করল। আবার রিং হয়ে চলেছে। সেই সঙ্গে সুরেনবাবুর উৎকণ্ঠার পারদও চড়চড় করে উপরে উঠছে।
তৃতীয় বার রিং করাতে কে একজন রিসিভ করল। সুরেনবাবু উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা মিশ্রিত কণ্ঠে এক নাগাড়ে বলতে লাগলেন- বেটা, ভালো আছিস তো? আইজ ছ’দিন হলি ফোন আসেইনি, তোর মা-ও খুব চিন্তা করছে…
ও প্রান্ত থেকে একটা গম্ভীর কণ্ঠস্বর ভেসে আসল – সোমেন অসুস্থ, এখন ঘুমোচ্ছে। আমি ওর শ্বশুর বলছি। আপনি পরে ফোন করুন।
সুরেনবাবুর বুকটা কেমন ছ্যাঁত করে উঠল। বিমলের ঘর থেকে বেরিয়ে আসলেন। তখন তাঁর চোখের কোণ চিকচিক করছিল। গিন্নী দরজায় অপেক্ষা করছিলেন, তাঁকে দেখে সুরেনবাবুর চোখের জল আর বাঁধ মানল না।
তবে, তাঁর কাঁদার মূল কারণটা কী, ছেলের অসুস্থতা না অবহেলা – তা অজানাই রয়ে গেল।
মতামত দিন