
দূগ্গা দূগ্গা
কথাকলি
দূগ্গা দূগ্গা
---------------------------------------
চন্ডীমন্ডপের ফাঁকা ঠাকুরদালান জুড়ে পরে আছে,
বিসর্জনের ডাকে চলে যাওয়া দূগ্গাপ্রতিমার
শূন্য বেদীর, নিরব, নিস্তব্ধ, শূন্যতা।
শূন্যতা মনের কোনায়, শূন্যতা বিদায়ের ক্ষণে,
শূন্যতা চোখের জলে, মনের না বলা কথায়।
শিশিরভেজা দুর্গোৎসবের শারদপ্রাতে,
রোজকার সেই কর্মব্যাস্ততা আর নেই।
নেই পঞ্চমীর দিনে...
কুমোরটুলি থেকে ঠাকুর আনার আনন্দ।
নেই ষষ্ঠীর দিনে...
প্রতিমার বরণডালা সাজানোর তোরজোড়।
নেই সবাই মিলে হাতে হাতে সব্জি কাটা।
নারকোল কোড়া, ভোগ প্রসাদ রান্নাবান্নার ঘটা।
একসাথে বসে, পাত পেরে মধ্যাহ্নভোজ খাওয়া।
নেই খড়িমাটি গোলা আর সিঁদূর দিয়ে,
মন্ডপের চাতালে পটু হাতে মনের কল্পনায়,
লতায়-পাতায় আল্পনা আঁকার আয়োজন।
তারপর এক ফাঁকে সকাল-সন্ধ্যায়,
এবেলা-ওবেলা পালা করে, যে যার
নিজেকে সাজিয়ে নেওয়া, নতুন শাড়ি গহনায়।
ড্যাংকুরাকুর ঢাকের তালে ধুনুচি নাচ আর
ঁশুভ বিজয়ার প্রীতি সম্ভাষণের আদান-প্রদান,
তারপর একেবারে সব শেষে ঠাকুর দালানে
একয়দিনের পূজার এতো আড়ম্বরপূর্ণ
আয়োজনের শেষ উপাচার প্রশস্তি বন্দনা হয়ে এলে
পুজোর নতুন পাটভাঙা শাড়িগুলো এক এক করে,
ফিরে যাবে সেই বন্ধ আলমারির অন্ধকারে।
এতোদিন ওরা গায়ে মেখেছিলো,
ধূপ, ধুনো, মালা, ফুল, চন্দন
আর আলোর রোশনাইএর সাথে পুজো-পুজো গন্ধ।
এখন ফিরে গিয়ে অন্ধকারে সেই পুরনো চেনা,
ন্যাপ্থালিনের গন্ধে ঘুমিয়ে পরবে নিশ্চিন্তে।
দশমীর বিষন্ন ঢাকের তালে বিকেল গড়িয়ে ধীরে
সন্ধ্যার আঁধার ঘনীয়ে আসে দূরে বহুদূরে...
বেলা শেষের রক্তাভ আকাশের বুকে,
এবার সূর্য্যি ডোবার পালা।
দেখা যায় দূরে ওই দূর থেকে দূরে...
ঘোলাটে গঙ্গার বুকে ভেসে চলেছে;
প্রতিমা নিরঞ্জনের পরিত্যক্ত কাঠামোগুলো।
মেয়ে-বৌদের সিঁদূরখেলা শেষ।
সূর্যাস্তের রক্তাভ রঙ বুঝি ধরা দিয়েছে,
ওদেরও কপালে, গালে, চিবুকে।
লালপাড় সাদা শাড়িতে,
জ্যান্ত দূগ্গারা সব সাঙ্গ করলো সিঁদূরখেলা।
এবার তাদেরও বুঝি যার যার ঘরে ফেরার পালা।
শুরু হবে আবার সেই নিত্যকার
ভোরে উঠে বাচ্চা কোলে, হাতাখুন্তির লড়াই।
দশমীর ভারী বাতাসে এখন বিদায়ের করুণ সুর।
সিক্ত, মেদুর হাওয়ায় ভাসছে সদ্য সমাপ্ত
সিঁদূর খেলার টাটকা রাঙা মন খারাপের গন্ধ।
আবার এক বছরের প্রতিক্ষা।
দূগ্গা---দূগ্গা----দূগ্গা---দূগ্গা...
কাছে দূরে সবাই যেনো ভালো থাকে মা।
ঘরে ঘরে সবাই যেনো সবার সাথে ভালো থাকে।।
মতামত দিন