সাহিত্য ও শাস্ত্রীয় সংস্কৃতি

বিড়ালমায়া

20 October 2020
লেখকের নাম: শরীফা সুলতানা
ধার: মজাহিদুল ইসলাম
দেখেছে: 93

ঠিক আছে। আমাকে বিয়ে করবে না ভালো কথা। তাই বলে আমাকে এতোটা নীচু করা। যেটা সে না করলেও পারত। আমি ওর পরিবারে গেলে ওর পরিবার ধ্বংস হবে? কি করে এমন একটা মনগড়া কথা বলা যায়? চোখের ধারায় বালিশ ভিজে যাচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই নিজেকে রোধ করতে পারছিনা। বার বার বাক্যটি কানে এসে আঘাত হানছে।

বিড়ালমায়া

Author's Name: শরীফা সুলতানা
Credit: 0

বিড়ালমায়া

লিখনেঃ শরীফা সুলতানা

ছোটগল্পঃ বিড়ালমায়া

-------------------------------------

মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লেও বোধ হয় অতোটা অবাক হতাম না। যতোটা অবাক হয়েছি তনয় আমাকে প্রত্যাখ্যান করাতে। বলতে গেলে প্রত্যাখ্যানেও বোধ হয় অতোটা আহত হতাম না যতোটা হয়েছি ওর কথার ধরনে। ও এই কথাটা কিভাবে বলল। “আমি চাই না আমার পরিবারটা ধ্বংস হয়ে যাক।” আমাকে ওর বিয়ে করতে হবে এমন কোনো প্রতিজ্ঞা আমার সাথে তার নেই। আমাকে সে ভালবাসে এমন কথাও কোনো দিন বলেনি। আমি ভাবলাম বাড়ি থেকে যখন বিয়ের তাড়া দিচ্ছে। আমারও পছন্দের কেউ নেই তনয়েরও নেই। অচেনা কাউকে যখন গ্রহণ করতে হবে সেক্ষেত্রে কথাটা পারা যায়।

তনয়। আমার বন্ধুই বলা চলে। বিভিন্ন সামাজিক কাজে জড়িত। আমি গান করি। কলেজের এক অনুষ্ঠানে ওর সাথে আমার পরিচয়। বিভিন্ন সংগঠনে গান করার বেশ কিছু সুযোগ সৃষ্টিতে সে সহায়তা করে। আমি বাধা দিতাম। বলতাম মেয়েদের এসব গান টানের গুনাবলী টিকিয়ে রাখা বেশ কষ্টের। অনেক সময় মাঝপথে থেমে যেতে হয়। কিন্তু আমার চেয়ে ওর আগ্রহই বেশি ছিল। ছোটখাটো একটা ভাষণ দিয়ে বুঝিয়েছিল কতোটা বোকামি করতে যাচ্ছি। অধিকার কেউ কাউকে দেয় না আদায় করে নিতে হয়। এখনকার যুগে মেয়েদের পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। নারী ছাড়া কোন কিছু সৃষ্টি সম্ভব নয়। আমাকে বুঝাতে থাকে অনেকে অনেক কটু কথা বলবে। এসব শুনে পিছিয়ে পড়া চলবে না। বলতে দ্বিধা নেই ওর ভরসাতেই অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিয়েছি। পাশাপাশি হেঁটেছি।

আজ আমার মনে হচ্ছে তনয়ের কথায় পুরো নারী জাতি অপমানিত। ওর মনের নিচুতা আমাকে অবাক করছে। তনয়ের সাথে কথা নেই আজ দশ দিন। এতো দীর্ঘ সময় কথা না বলে থাকাটা এবারই প্রথম। ও এসেছিল। আমি গা করিনি। নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছিল আমার। কেন যে ওকে বলতে গেলাম। আসলে ছেলেরা অমনিই। ওরা অন্য বাড়ির মেয়েদের রাস্তায় বের হতে উৎসাহিত করলেও নিজেদের ঘরের মেয়েদের জানালাও ঘেঁষতে দিতে চায় না। কিন্তু তনয়কে আর দশটা পুরুষের সাথে মিলাতে চাইনি। ভাবনাগুলো কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।

আজ ভীষণ মন খারাপ। পার্কে এসে বসে আছি। তনয়কে এগিয়ে আসতে দেখে উঠে দাঁড়ালাম।

কথা বলার প্রয়োজন কি!

দাঁড়া।

একটু থামলাম কি ব্যাপার,

আজকাল এড়িয়ে থাকিস মনে হয়।

সেটা কি অস্বাভাবিক?

মানে?

ধর, তোর সাথে কথা বলছি এটা পাত্রপক্ষের কেউ যদি দেখে। তবে আমার বিয়েটা হবে?

এসব কি বলছিস। যাদের এতো ছোট মন…

থাম, আর মনের বড়াই করবিনা। মন ছোট। বড় মনের মানুষ কোথায় পাব বল?

আসলে তোকে আমি বন্ধু হিসাবে দেখি তাই বলেছি।

সেজন্য বলিসনি। এটা বুঝার মতো বুদ্ধি আমার আছে।

কি বুঝার?

এই যে আমি সাংগঠনিক কাজ করি। দশ জন পুরুষ সহকর্মী আমার পাশে। পাঁচ জনে পাঁচ কথা বলে। তুই ধরেই নিয়েছিস আমাকে দিয়ে সংসার হবে না।

কি বলছিস তুই?

ঠিক বলছি। যে মেয়ে গান করে সে আবার ঘর করবে কি? কিন্তু আজ তোকে একটা কথা দিয়ে যাচ্ছি। আমি বিয়ে করে বাইরে কাজ করে ঘরটাকে এমনভাবে সাজাবো তখন তোর ঈর্ষা হবে। সত্যিকারের ঘর। টাকা পয়সার প্রাচুর্য কতোটুকু থাকবে জানি না তবে থাকবে ভালোবাসার, বিশ্বাসের প্রাচুর্য। প্রমিজ করলাম।

তনয়কে আর কথা বলার সুযোগ দিলাম না। পা বাড়ালাম। আজ পাত্রপক্ষ আসবে। বিড়ালমায়া বাড়িয়ে লাভ নেই।।