লাইফস্টাইল সংস্কৃতি

আনন্দে থাকার কয়েকটি সহজ উপায়

26 October 2020
লেখকের নাম: মজাহিদুল ইসলাম
ধার: মজাহিদুল ইসলাম
দেখেছে: 185

আমাদের সুখে বা আনন্দে থাকার সম্পর্কটা বাহ্যিক আয়েশ ও আরাম অথবা বিলাসবহুল জীবনের সঙ্গে নয় বরং সুখী হওয়াটা বা আনন্দে থাকাটা সম্পূর্ণরূপে আমাদের অভ্যন্তরীন বিষয়। আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরব উদ্বেগ-অতি চিন্তা, দুঃখ ও উদাসীনতা থেকে মুক্তি পাওয়ার কয়েকটি সহজ উপায় ও পন্থা। অবশ্যই আপনারা নিজেদের জীবনে সে পন্থাগুলো বাস্তবজীবনে পালন করার চেষ্টা করবেন।

আনন্দে থাকার কয়েকটি সহজ উপায়

Author's Name: মজাহিদুল ইসলাম
Credit: 0

আনন্দে থাকার কয়েকটি সহজ উপায়

মূল উর্দুঃ সাইয়্যাদ শাহবায আলম

অনুবাদেঃ মজাহিদুল ইসলাম

আনন্দে থাকার কয়েকটি সহজ উপায়

-----------------------------------------------------------------

আমরা সকলে আনন্দ ও সুখে থাকতে চাই। আসলে একটি সুখ ও স্বাচ্ছন্দময় জীবনযাপন অতিবাহিত করাই আমাদের প্রত্যেকের উদ্দেশ্য ও ইচ্ছা। আচ্ছা, আমরা কী কঠিন পরিস্থিতিতেও সুখে বা আনন্দে থাকতে পারি? প্রচুর পরিমাণে ধন-সম্পত্তি এবং বিলাসবহুল জীবনই কি সুখ দিতে পারে? কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতই হোক কিংবা সৌভাগ্যবশতই হোক না কেন এমনটা হয় না। যদি এমনটাই হত তবে প্রত্যেক বিত্তবান ব্যক্তি আনন্দের বা খুশির এবং সন্তুষ্টির জীবনযাপন অতিবাহিত করত। কিন্তু সম্পূর্ণরূপে এমনট হয় না। তাহলে আনন্দে থাকার মূল রহস্যটা কী? আনন্দে থাকা বা দীর্ঘদিন যাবৎ সুখে বা আনন্দে থাকা এতটা কঠিন কেন?

বেশি বেশি করে হাসুনঃ

বেশি বেশি হাসি আপনার জীবনে এনে দেবে এক আনন্দদায়ক পরিবর্তন। আর আপনি বিশ্বাস করুন, এর ফলে পূর্বের তুলনায় আপনার জীবন হয় উঠবে বেশি সুখময়। আপনার হাসি যে শুধু আপনার জীবনের পরিবর্তন নিয়ে আসবে তা নয়, বরং আপানার আশেপাশের পরিবেশের প্রতিও এর ভালো প্রভাব পড়বে এবং পরিবেশ হয়ে উঠবে মনোরম ও আনন্দদায়ক। কিছু মানুষ এমন রয়েছেন যারা দিনের শুরুতে অর্থাৎ সকাল সকাল ৫ মিনিট অবিরাম হেসে নিজের দিন শুরু করেন এবং এর কারণেই তাদের সম্পূর্ণ দিন খুব ভালোভাবেই অতিক্রান্ত হয়।

জীবনকে বেশি গম্ভীরভাবে না নেওয়াঃ

জীবনকে খুব বেশি গুরুত্বসহকারে বা গম্ভীরভাবে নেওয়ার প্রয়োজন নেই। আমাদের জীবন পরিধি খুবই স্বল্প আর এই স্বল্প জীবনে যদি আমরা জীবনকে খুব বেশি গম্ভীরভাবে নিয়ে ফেলি তবে সেই গাম্ভির্যতা আমাদের খুশি, আনন্দ, মজা, আমাদের জীবনের এনার্জী কেড়ে নেবে। অযথা পরিস্থিতির গুরুতরতা জীবনে উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি করে। এমনকি এটি আপনাকে আপনার সৃজনশীলতা এবং আপনার মধ্যেকার নতুনত্ব থেকে দূরে রেখে দেয়।

ইতিবাচক চিন্তাভাবনা রাখাঃ

আপনি হয়ত অনেককে এটা বলতে শুনেছেন যে, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা ছেড়ে দিন এবং ইতিবাচক ভাবে চিন্তাভাবনা করুন। কিন্তু অধিকাংশই আমরা এই কথাটাকে এড়িয়ে যাই। আসলে আমরা অনেকেই এ কথার গভীরতাকে বুঝে উঠতে পারিনা। মূলত নেতিবাচক চিন্তাভাবনা এমন এক ছায়াছবির মত যা আপার মনের পর্দায় তাই দেখাবে যাতে করে আপনি সর্বদা দুঃখিত এবং রাগান্বিত হয়েই থাকেন। তাই আমাদের সুখ ও স্বাচ্ছন্দময় ও আনন্দদায়ক জীবন অতিবাহিত করার জন্য আবশ্যক কাজ হলো নিজের মধ্য হতে নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনাগুলো বর্জন করা।

অন্যের ভুল-ভ্রান্তিকে ক্ষমা করে দেওয়াঃ

ক্ষমা করা একটি খুব বড় মহান কাজ। সবার মধ্যে এই মহানুভবতা থাকেনা। ক্ষমা করার বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে মানসিক, আধ্যাত্মিক এবং আবেগের বিষয় যা আপনাকে আপনার ক্রোধ থেকে দূরে রাখবে। ক্ষমা করার ক্ষমতা খুব কম লোকেরই থাকে। এটি একটি ইতিবাচক মনের ব্যক্তির পরিচয়। রাগ-ক্রোধ এবং অসন্তুষ্টির জন্য আমরা আমাদের অনেক ভালো ভালো সম্পর্কগুলোকে হারিয়ে ফেলি। ফলে আমাদের জীবন থেকে সুখ-শান্তি হারিয়ে যায়।

আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখাঃ

জীবন বড়ই কঠিন এবং মানুষই সবচেয়ে কঠিন জিনিস। জীবন পথে কোথাও না কোথাও আমরা আমাদের সবচেয়ে কঠিন মূহুর্ত এবং জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময় অতিবাহিত করেছি এবং সেই সব মুহুর্তগুলো আমাদের চাপের মুখে ফেলে দেয়। সেই কঠিন পরিস্থিতিগুলোতে যদি আমরা নিজেদের মনকে নিজেদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারি তবে হয়ত আমরা দীর্ঘ সময়ের জন্য হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়তে পারি অর্থাৎ ডিপ্রেশনে ভুগতে পারি। তবে সেই সমস্ত কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি বা সামনা সামনি হতে নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে। নিজের আবেগকে লাগামছাড়া করে দিয়ে নিয়ন্ত্রণহীন করে দিলে শুধু হতাশা ছাড়া আর কিছু হাতে আসবেনা। তাই আমাদের উচিৎ খুব বেশি আবেগপ্রবণ না হওয়া।

ব্যস্ততার মাঝেও নিজের আরামের জন্য সময় বের করাঃ

জীবনের গতির সাথে চলা সত্ত্বেও আমাদের শরীর ও মনের বিশ্রামের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। অল্প একটু সময়ের জন্য হলেও আমাদের উচিৎ নিজের ব্যস্ততা থেকে একটু আড়ালে রেখে নিজের জন্য সময় বের করে নেওয়া, শারীরিক ও মানসিক আরামের জন্য সময় বের করে নেওয়া। এটা সত্য যে আমাদের কাজ করাটা অত্যন্ত জরুরী, তবে কাজের সাথে বিশ্রাম নেওয়াটাও অধিক জরুরী। কাজের জন্য যদি আমরা বিশ্রাম থেকে বিরত থাকি তাহলে আমাদের শরীরের সাথে সাথে আমাদের মন ও ভালো থাকবেনা। তাই শরীর ও মনকে সুস্থ্য রাখতে আমাদের প্রয়োজন বিশ্রামের। শরীর ও মন ঠিক থাকলেই আমরা একটি সুখময় ও আনন্দের জীবন কাটাতে পারি।

সঙ্গীত শ্রবণ করাঃ

রোজ নিজ পছন্দ মতো, নিজের প্রিয় সঙ্গীত শুনুন। সঙ্গীত শিল্প হৃদয়, মন এবং শরীরে অত্যন্ত ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং এই সঙ্গীতশিল্প আপনার মধ্যে মানসিক শক্তির সঞ্চার ঘটাবে, মানসিক চাপগুলোকে হ্রাস করবে, এই সঙ্গীত আপনাকে নিয়ে যাবে আপনার রিলাক্স মোডে। যদি সম্ভব হয় তবে হাল্কা সঙ্গীত চালিয়ে আপনি আপনার কাজগুলোও সম্পন্ন করতে পারেন। এটি আপনাকে আরোও ভালোভাবে কাজ করতে সহায়তা করবে। আপনি চাইলে ধর্মীয় সঙ্গীত বা আধ্যাত্মিক সঙ্গীতও শুনতে পারেন, আপনি আপনার নিজ ধর্ম গ্রন্থের অডিও রেকর্ডিংও শুনতে পারেন।

সেই কাজ করুন, যে কাজ করতে আপনি ভালোবাসেনঃ

আমাদের অধিকাংশই আমাদের নিজের ব্যস্ততার কারণে অথবা অন্যের খুশির জন্যে আমরা আমাদের নিজেদের খুশি, ইচ্ছে, শখ ও চাহিদা গুলো ভুলে যাই। আমাদের প্রতিদিনের রুটিন মাফিক কাজ করার সাথে সাথে আমাদের নিজের পছন্দের, আমাদের ভালোলাগা বা ভালোবাসার কিছু কাজও করা উচিৎ। যাতে করে আমরা আমাদের এই স্বল্পকালীন জীবনকে সঠিকভাবে উপভোগ করতে পারি। তাই আমাদের উচিৎ আমাদের সে কাজই করা যে কাজ আমাদের আনন্দ দেয়, তবে খেয়াল রাখতে হবে যে, আমাদের পছন্দের কাজটি যেন সমাজ স্বীকৃত ও রুচীসম্মত হয়ে থাকে।

বন্ধুত্ব করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করাঃ

আমাদের জীবনে বন্ধু বা বন্ধুত্বের গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা যদি একটি ভালো জীবনযাপন করতে চাই তবে আমাদের জীবনে কিছু ভালো ভালো মানুষ বা ভালো বন্ধুর সঙ্গ হওয়াটা অবশ্যই দরকার। আমরা যদি অবিশ্বস্ত কঠোর হৃদয় প্রকৃতির এবং স্বার্থপর ব্যক্তিদের মধ্যে বাস করি বা এমন প্রকৃতির মানুষ যদি আমাদের মধ্যে থাকে, তবে আমরা চরম ভাবে প্রতারিত হতে পারি। যার ফলে আমাদের জীবন হয়ে উঠতে পারে অত্যন্ত দুর্বিষহ। পক্ষান্তরে, যদি আমাদের নিকটস্থরা অর্থাৎ ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা যদি জ্ঞানী, দয়ালু, পবিত্র মনে অধিকারী, নিস্বার্থ ও অনুগত প্রকৃতির হয়ে থাকে তবে আমাদের জীবন সুখের সাথে ভরে উঠবে। আমাদের উচিৎ হবে যে যখন আমরা কারো সাথে ওঠা বসা করব কারো সঙ্গে মিশবো তখন আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে সে কী প্রকৃতির। তাই বন্ধুত্ব করার সময় সর্বদা সতর্ক থাকুন।

সম্পর্ক বা আত্মীয়তার বন্ধনের গুরুত্বকে বোঝাঃ

একটি সুখি ও আনন্দময় জীবন অতিবাহিত করতে আত্মীয়তার বন্ধনকে বোঝা একান্ত প্রয়োজন। এর জন্য আরোও প্রয়োজন আমাদের প্রিয়জনদের সাথে ভালো আচরণ করা এবং সম্পর্কগুলিকে আরো মূল্যবান করে তোলা। আমরা অনেকেই হয়তো এটা লক্ষ করে থাকব যে, আমাদের নিকটবর্তী বা আমাদের স্বজনদের অধিকাংশই চান যে আমরা যেন সফল এবং সুখী হই। আমরা অনেক সময় এটা ভুলে যাই যে আমাদের সুখেই তাদের সুখ। সুখময় ও আনন্দের সহিত জীবন অতিবাহিত করার জন্য আমার প্রয়োজন প্রতিটি সম্পর্কের মাধুর্য্যতাকে বজিয়ে রাখা। সম্পর্কের মধ্যে মাধুর্য্যতা বজায় রাখার একটি উদাহরণ স্বরূপ ধরুন আপনি আপনার জব ছেড়ে দিচ্ছেন, তাহলে আপনার বসের সাথে ঝামেলায় জড়াবেন না বা বসের সাথে লড়াই করবেন না। একইভাবে আমরা যখন কোনও বাড়ি ভাড়া নিচ্ছি বা ভাড়া বাড়ি পরিবর্তন করছি তখন আমাদের দুই পক্ষেরই উচিৎ একে অপরের প্রতি সুসম্পর্ক স্থাপন করে রাখা।

নিজের প্রতি যত্নবান হওয়াঃ

অতীত বড়ই কষ্ট দেয়। অতীতের ভুলগুলি থেকে আমরা শিক্ষা অর্জন করব ঠিকই তবে নিজেদেরকে অতীতের বেদনাদায়ক স্মৃতিগুলো থেকে সর্বদা দূরে রাখতে সচেষ্ট হতে হবে এবং নিজের জীবনকে সুখময় করে তুলতে আমাদের উচিৎ হবে অতীতের কথাকে না মনে করে নিজের বর্তমানের প্রতি মনোনিবেশ করা। বর্তমান সময়ে আমরা কি করছি না করছি সেটাই সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের অন্তরে অতীতের বেদনাদায়ক স্মৃতি এবং ভবিষ্যতের স্বপ্নের যাওয়া আসা লেগেই থাকে, আমাদের উচিৎ হবে যতটা সম্ভব তা থেকে নিজদের দূরে রাখার চেষ্টা করা। তাই নিজের প্রতি খেয়াল রাখতে যোগব্য্যাম আমাদের জন্য অনেকটাই সহায়ক। যোগব্যায়াম এং ধ্যান আমাদেরকে আমাদের চিন্তা-ভাবনাগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করবে যার ফলে আমরা অতীতকে ভুলে সুখ ও স্বাচ্ছন্দের সহিত জীবন অতিবাহিত করতে সক্ষম হয়ে উঠব।

এই ছিল বেশ কয়কটি উপায় যেগুলো আমাদেরকে জীবনে আনন্দ নিয়ে আসতে সাহায্য করবে।